সারা রাত ভেজা একটা খরা জালের গল্প
দুপুর থেকেই মন্তাজের শরীরে হাল্কা জ্বর। সাথে মাথা ব্যথাও আছে। জ্বরের কারণে রাতের খাবার খুব বেশি খেতে পারেনি। খাওয়ার রুচি হয়নি। তবে বাড়ি থেকে নয়নজুলি আসার সময় বৌ একটা ট্যাবলেট ঠিকই খাইয়ে দিয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে মন্তাজ ভাবে, ট্যাবলেটের চেয়েও বড় ওষুধ মাথার মধ্যে বসে আছে তার। ঘরে এক মুঠো চাল নাই। কথাটা মাথার মধ্যে নড়েচড়ে উঠতেই শরীরটা ঝরঝরে হয়ে যায়। ঝিমিয়ে আসা পা দুটোতে গতি বাড়ে। তবে সবচেয়ে বড় ওষুধ আছে মন্তাজের সারা মন জুড়ে। মেয়েটা আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একটানা জিদ করেছে। সে একটা শোল মাছের বাচ্চা দিয়ে ভাত খাবে। পলিথিনে মোড়ানো একটা ছবির বই কিনে দিয়েছে আগের সপ্তাহে। সেই বইয়ের শোল মাছের প্রতি তার ভীষণ ভয়। শোল মাছটা নাকি তাকে খালি ভয় দেখায়। তাই সে তার বাচ্চাকে রান্না করে খাবে। মেয়েটার জিদের কথা মনে হতেই মন্তাজের পাগুলো আরও দ্রুত চলে।
জ্যৈষ্ঠ মাস প্রায় শেষের দিকে। বর্ষা এবার একটু আগেই আসার কারণে নয়নজুলি নতুন পানিতে ভরে গেছে। শোল মাছের বাচ্চাগুলো এখন মায়ের থেকে আলাদা হয়ে গেছে। তবে তার খরা জাল দিয়ে শোল মাছের বাচ্চা ধরা বেশ কঠিন কাজ। পানি থেকে জাল উঠাতে উঠাতেই জালে যেটুকু পানি থাকে তাতেই তার লম্বা আর চিকন শরীর ভিজিয়ে নিয়ে এক নিমিষে বেরিয়ে যায় জাল থেকে। আজ রাতে যেভাবেই হোক আটকাতে হবে। একটা পেলেও সে খুশি। মেয়েটার কান্না সইতে হবে না আর।
হাল্কা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মন্তাজ দ্রুত পা চালায়। কয়েক মিনিটের পৌঁছে যায় তার খরা জালের পাশে। রাস্তা থেকে প্রায় আট-নয় হাত দূরে তার খরা জাল। জালে বসার মাচা পর্যন্ত একটা বাঁশ দেওয়া আছে। বাঁশের কয়েক হাত ওপরে আবার একটা কঞ্চি দেওয়া। বাঁশের ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কঞ্চিটা ধরে এগোলে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে না।
জ্বরের কারণে হোক, অথবা তাড়াহুড়ার কারণে হোক, অথবা বাঁশ বৃষ্টিতে ভিজে পিচ্ছিল হওয়ার কারণেই হোক বসার মাচা থেকে হাত তিনেক দূরে থাকতেই মন্তাজের পা পিছলে যায়। কঞ্চিটা আর তার শরীরের ভার নিতে পারেনি। ভেঙে গিয়ে পুরো শরীর নয়নজুলির পানিতে ডুবে যায়। বাকি পথটুকু সাঁতরে গিয়ে মাচায় ওঠে মন্তাজ। কিন্তু যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে গেছে। কোমরের পাশে লুঙ্গিতে পেঁচিয়ে সাথে বিড়ির প্যাকেট আর ম্যাচের বাক্স পুরোটায় ভিজে গেছে। হারিকেনটা আজ আর জ্বালানো যাবে না। অন্ধকারে বসেই মাছ ধরতে হবে।
মন্তাজ ভেজা গামছা ভালো করে চিপে লুঙ্গির মতো করে পরে নেয়। লুঙ্গিটা এক পাশে বাঁশের ওপর নেড়ে দেয়। বৃষ্টি থেমে গেছে। তবে দূরের আকাশে এখনো মাঝেমধ্যে আলোর ঝলকানি দেখা যাচ্ছে। গুড়গুড় করে শব্দ করে ডাকছে মেঘ। খরা জাল পানিতে ছেড়ে দিতে দিতে মন্তাজ ভাবে, একটানা বৃষ্টি থাকলে মাছ পাওয়া মুশকিল হয়ে যেত। বৃষ্টি আবার আসতে পারে ধরে নিয়েই বৃষ্টি আসার আগেই আল্লাহ্র কাছে আজ একটু বেশি মাছ চাইতে থাকে মন্তাজ। অবশ্য এটা ছাড়া তার আর কোনো কাজও নাই। অন্যদিন হয়তো ম্যাচ বের করে বিড়ি জ্বালাত অথবা হারিকেনের সলতে কমবেশি করতো। আজ এই দুই কাজের কোনোটাই নাই। মন্তাজ ভাবে, এভাবে চুপ করে বসে থাকা যাবে না। একটা কাজ বের করে নিতে হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভালো একটা কাজ পেয়ে যায় সে। খানিকক্ষণ পর পর লুঙ্গিটাতে হাত দিয়ে দেখা আর উল্টায়ে দেওয়া। হাল্কা একটু বাতাস আছে। আর যদি বৃষ্টি না আসে তাহলে ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে হয়তো শুকাতে পারে।
মন্তাজের আশায় গুঁড়ে বালি। বিদ্যুতের ঝলকানিগুলো এখন তার অনেক কাছাকাছি চলে এসেছে। আকাশের এপাশ থেকে ওপাশে চিরে ফেলছে। মেঘগুলো এখন আর গুড়গুড় করছে না। বরং কড় কড় কড়াৎ করে কান ফাটিয়ে দিচ্ছে। এই আলো আর শব্দের খেলা মন্তাজের কাছে অনেক আগে থেকেই পরিচিত। খরা জালটা যেমন বছরের পর বছর ধরে তার সঙ্গী, ঠিক একই ভাবে ওরাও তার সাথী। আগে কখনই তাদের ভয় পেত না সে। কিন্তু গত সপ্তাহে দিনের বেলায় মাঠের মধ্যে বাজ পড়েছিল। হাকিম মিয়া আর তার জোয়ান ছেলেটা একসাথে মারা গিয়েছিল। তবে মন্তাজের একটা বিশ্বাস আছে যে, আল্লাহ্ অন্তত আজকে তাকে মারবে না। সে আজ মারা গেলে তার মেয়েটাকে শোল মাছের বাচ্চা কে খাওয়াবে! আল্লাহ্ এতটা বেরহম হবেন না নিশ্চয়ই।
আল্লাহ্ তাকে এই মুহূর্তে না মারলেও বৃষ্টি নামিয়ে দেন। একদম ঝমঝমিয়ে। মন্তাজ লুঙ্গিটাকে ভাঁজ করে পাছার নিচে রাখে। তারপর একটা খুঁটির সাথে বেঁধে রাখা পলিথিনের বস্তা খুলে গায়ে মোড়ায়ে নেয়। ইউরিয়া সারের বস্তার ভেতরে ছিল এই পলিথিন। বেশ মোটা আর শক্ত। মন্তাজের বৌ কার পাঁউশ থেকে কুড়িয়ে এনে সেলাই করে তাকে দিয়েছে। পুরো একটা স্যান্ডো গেঞ্জির মতো। মাথার জন্য আলাদা একটা টুপিও বানিয়ে দিয়েছে। এগুলো গায়ে আর মাথায় জড়ায়ে বৃষ্টির পানি থেকে অন্তত শরীর আর মাথাটাকে বাঁচায় সে। কিন্তু বৃষ্টির শব্দ পলিথিনের ওপর পড়ে তার কান ঝালাপালা করে দিচ্ছিল। কোনোরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে জাল উঠায় মন্তাজ। কিছু পুঁটি মাছ, কয়েকটা বাচ্চা কাঁকড়া আর কিছু পোকা উঠেছে। কাঁকড়া, পোকাসহ মাছগুলোকে একটা অ্যালুমিনিয়ামের বাটিতে করে জাল থেকে তুলে নেয়। এই বৃষ্টির মধ্যে মাছ থেকে কাঁকড়া আর পোকাগুলোকে আলাদা করার ধৈর্য নাই তার। তাই মাচার পাশে রাখা খলির সরু মুখ দিয়ে ভেতরে চালান করে দেয়। খলির বেশিরভাগ অংশই পানির নিচে থাকায় মাছগুলো সারারাত বেঁচে থাকে।
মাঝরাত পেরিয়ে বৃষ্টি থামে। গায়ে আর মাথায় জড়ানো পলিথিন খুলে বাঁশের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখে। পাশে রাখে তার লুঙ্গি। সকালে মাছ নিয়ে পাড়ে উঠেই ওটা পরে নেবে। নয়নজুলির পানি বেড়ে তার বসার মাচা পর্যন্ত উঠে এসেছে। মাঠের পানি নয়নজুলিতে নেমে আসায় পানি বাড়ছে। মন্তাজ জানে পানি আরও বাড়বে। মাচার বসার জায়গা ডুবে যাওয়ার পর দাঁড়িয়ে থাকে সে। এছাড়া উপায় নাই। জালে মাছ পড়ছে। একবার তো প্রায় চার বাটির মতো পুঁটি মাছ এসেছে। টাকি, চিংড়ি, বাচ্চা মাগুর, নতুন কৈ, বেলে, খলশে, চান্দা মাছ, সবই আছে। কয়েকটা কাতলা মাছের পোনাও পেয়েছে। চাষের মাছ। মনে হয় কারো পুকুর ডুবে গেছে। ওরা সুযোগ বুঝে বেরিয়ে পড়েছে। লাভ হয়নি। মন্তাজের জালে এসে ধরা পড়তে হয়েছে।
এত মাছের ভিড়েও মন্তাজের অতৃপ্তি রয়ে গেছে। মেয়ের জন্য একটা শোল মাছের বাচ্চা লাগবে। তাইতো জাল উঠানোর সময় আল্লাহ্ আল্লাহ্ করে। একবার আল্লাহ্ তার ডাক কবুলও করে। মন্তাজ আনন্দে আত্মহারা হলেও জাল থেকে সাবধানে বাটিতে উঠায়। কিন্তু মাছের খলিতে রাখার সময় লাফ দিয়ে খলির বাইরে পড়ে। মাছটা আবার ধরার জন্য সেও ঝাঁপিয়ে পড়ে পানিতে। নিজের বোকামি দেখে হাসি পায় মন্তাজের। শুকনো জায়গাতেই যে মাছ ধরা যায় না, তাকে ধরার জন্য পানিতে লাফ দিয়েছে।
পানিতে যখন নেমেই পড়েছে তখন আরেকটু কষ্ট করে বসার মাচা একটু উঁচু করতে লেগে যায় মন্তাজ। পানির স্রোত ভালোই বেড়েছে। পানির নিচে একটা খুঁটিকে দুই পা দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে। পরে মাচার তিনটা বাঁধন একটা একটা করে খুলে উঁচুতে বেঁধে নেয়। মাছের খলিটাকেও উঁচু করে বাঁধে। তার পর মাচায় উঠে পরনের গামছাটা খুলে ভালো করে পানি চিপে নিয়ে সারা শরীর ভালো করে মুছে নেয়। পরে গামছাটা আবার চিপে পরে নেয়। গা কাঁপছে তার। এই সময় একটা বিড়ির দরকার ছিলো। এখন আর সে চিন্তা করে লাভ নেই। ভাবে, কাল থেকে বিড়ি আর ম্যাচ পলিথিনে মোড়ায়ে নিয়ে আসবে।
মাচা একটু উঁচু হওয়ায় এবার একটু আরামে বসে জাল ফেলে মন্তাজ। ফজরের নামযের আযান শোনা যাচ্ছে। চারিদিকে আলো ফুটছে। কী একটা যেন জোরে টোকা মারে জালে। মন্তাজ দেরি না করে সাথে সাথে জাল তুলে ফেলে। একটা সিলভার কার্প মাছ। আধা কেজির মতো হবে। মাছটাকে হাত দিয়ে ধরে সাবধানে খলিতে রাখে। হাতের একটা আঙুল থেকে চির চির করে রক্ত বেরোচ্ছে। সাথে প্রচণ্ড ব্যথা। জালের দিকে ভালো করে চেয়ে দেখে। একটা শিং মাছের বাচ্চা জালের সাথে প্যাঁচ খেয়ে আছে। সিলভার কার্প মাছ উঠানোর সময় ঐ শিং মাছটা কাঁটা ফুটে দিয়েছে। মাছটাকে খুলতে গিয়ে বামহাতের বুড়ো আঙুলে কাঁটা ঢুকে যায়। এবারে সে একদম মন্তাজের আঙুলের সাথে ঝুলে যায়। ডান হাত দিয়ে মাছের মাথাটা ধরে এক টানে বের করে আনে। রক্ত বের হচ্ছে। সেটা বড় একটা সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে তীব্র ব্যথা।
সময় দ্রুত পেরিয়ে যাচ্ছে। একটা বাচ্চা শোল মাছ ধরতে হবে মেয়েটার জন্য। কিন্তু দিনের আলো বাড়ার সাথে সাথে মাছের পরিমাণ কমছে। মন্তাজ যখন আশা ছেড়েই দিয়েছে, তখনই মিলে যায় তার কাঙ্ক্ষিত মাছ। একটা নয়, দুইটা। সাবধানে মাছগুলোকে কাছে নিয়ে বাটি দিয়ে জোরে আঘাত করে। একটার গায়ে লাগে। অন্যটা জালের ধাক্কায় ছিটকে গিয়ে পানিতে পড়ে। জালের মধ্যে যেটা চিত হয়ে পড়েছিল সেটাকে উঠায়ে মাছের খলিতে রাখে মন্তাজ। একটাকে হারানোর কিছুটা ব্যথা থাকলেও মেয়েটার আশা যে পূরণ হবে এটা ভাবতেই তার মন খুশিতে ভরে উঠছে।
সকালের লালচে আকাশটাকে কয়েকটা কালো মেঘ আড়াল করে রাখতে চাইছে। সূর্যটা বার বার উঁকি দিলেও বের হতে পারছে না। তবে মন্তাজের মন আজ বেশ ফুরফুরে। সারা রাতের বৃষ্টিতে ভেজা সকালের শীতল বাতাসের মতো। খরা জাল থেকে মাছের বড় খলিটা নিয়ে খালের পাড়ে যাওয়ার তর সইছে না তার। পরনের গামছার দিকে নজর পড়তেই নিজের কাছেই লজ্জা লাগে। কয়েক জায়গায় ছেঁড়া। এটা পরে মানুষের সামনে যাওয়া যাবে না। বাধ্য হয়েই লুঙ্গিটা পরে নেয়।
পাড় থেকে রমিজ মিয়া হাঁক ছাড়ে, “তোর কী আজ সকাল হয়নি রে মন্তাজ? তাড়াতাড়ি পাড়ত আয়। কয়ডা মাচ লিয়া যাই। আয়রে ভাই। আয়। আর দেরি করাস না।”
“আসিচ্চি অমিজ ভাই। অল্পি অ্যানা দেরি করেন।” বলেই মন্তাজ লুঙ্গিটা মালকোঁচা মেরে মাচা থেকে ঝুপ করে পানিতে নামে। মাছের খলির গলার সাথে বাঁধা রশিটা খুলে দেয়। তারপর খলিটা নিয়ে ধীরে ধীরে নয়নজুলির পাড়ের দিকে যেতে থাকে। খলির ভেতরের জীবিত মাছগুলো তখনো খলবল করছে। মন্তাজ ভাবে, শোল মাছের বাচ্চাটা যদি জীবিত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া যেত। নিশ্চয়ই মেয়েটা অনেক খুশি হতো।
মাছের খলিটা নিয়ে রাস্তার পাশে আসতেই চেয়ারম্যান সাহেবের মোটরসাইকেল সাদা ধোঁয়া তুলে পাশে এসে দাঁড়ায়। চেয়ারম্যান সাহেবকে দেখে রমিজ মিয়া বাড়ির দিকে হাঁটতে থাকে। মন্তাজ লুঙ্গির পানি চিপে ফেলে দিতে দিতে বলে, “রমিজ ভাই, মাচ লিবেন না?”
রমিজ পেছন ফিরে কিছু বলতে যায়। কিন্তু তার আগেই চেয়ারম্যান সাহেব গলা খাঁকারি দিয়ে গলাটা পরিষ্কার করে নিয়ে জোরে শব্দ করে বলে, “অমিজ কি চেয়ারম্যানের মাচে ভাগ বসাবার চায় নাকি? কী অমিজ? কী কও?”
রমিজ কিছু বলে শুধু মাথা নাড়ে। তারপর আবার হাঁটতে শুরু করে।
চেয়ারম্যান মন্তাজের দিকে হাত বাড়ায়, “খলিটা আমাকে দে!”
মন্তাজ খুশি হয়ে বলে, “সব মাচ লিবেন?”
“চেয়ারম্যান কী আবার তোদের ফকিন্নিদের মতোন ভাগা খায় নাকি রে?”
“ঠিক আচে, ল্যান! পুরাই ল্যান! এক হাজার ট্যাকা দেওয়া লাগবে কেলে। অনেক মাচ।”
“কীসের ট্যাকা রে?” চেয়ারম্যানের গলার সুর আরও চড়া হয়।
“মাচের ট্যাকা। দিবেন না?” মন্তাজের কণ্ঠে আকুতি ঝরে পড়ে।
“ওরে হারামখোর! পাঁচশ ট্যাকা লিছিস না ইলেকশনের আগে । ভোট তো আর হামাক দেসনি। যা, তোর মাচ দিয়া ঐ ট্যাকা আজ শোধ গ্যালো।”
মন্তাজের বুকের ভেতরের একটা কান্না গলা দিয়ে বের হয়ে আসে। বলে, “একটা শোল মাচের বাচ্চা আচে খলির ভিতর। হামার ছলের খুব শকের মাচ। অ্যানা বার কর্যা লেই।”
“হারামখোর! আবার কতা কস? হামার অ্যাতো টাইম নাই। তোর টাইম আছে, তুই আবার জাল লিয়া বস। শোল মাচের বাচ্চা ধর।” পেছনে বসা লোকটার হাতে মাছের খলি ধরায়ে দিয়ে চেয়ারম্যান সাহেব তার মোটরসাইকেলে সাদা ধোঁয়া তুলে চোখের পলকে উধাও হয়ে যায়।
মন্তাজ একবার আকাশের দিকে চেয়ে বৃষ্টির কথা ভাবে। চেয়ারম্যান সাহেব তো ঠিক কথায় বলেছে। তার হাতে অফুরন্ত সময়। সে আবার জালে বসবে। একটা শোল মাছের বাচ্চা ধরে তারপর বাড়ি ফিরবে। একটা শোল মাছের বাচ্চা। পরক্ষণেই মনে হয়, বাসায় চাল নাই। চাল কেনার জন্য অন্য মাছও ধরতে হবে তার। ঝাপসা চোখে মন্তাজ খালের পানির দিকে চেয়ে থাকে। জালটাকে আবার ভেজাতে হবে। ভিজুক। পরনের ভেজা কাপড়গুলো তো রোদে শুকাবে। পেটটা ক্ষুধায় মোচড় দিয়ে ওঠে। মাঝরাতের পর থেকেই সে এমনটা করছে। কিন্তু এখন তীব্রতা অনেক বেশি। জ্বর নেমে গিয়ে ক্ষুধা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। মন্তাজের মনে হচ্ছে, সে একটা জ্যান্ত মাছ, এমনকি মানুষও চিবিয়ে খেতে পারবে এখন।
(প্রথম প্রকাশ, দৈনিক সংবাদ, ১৬ আগস্ট ২০২৩)