হাটবাজার
১
বাজারে গিয়েছিলাম কিছু চিংড়ি মাছ নিতে। কয়েকটা মাছের দোকান ঘুরে যেখানে মাছ পছন্দ হলো, সেখানে মানুষ যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। দেরি করলে হয়তো আর পাওয়া যাবে না তাই দাম জিজ্ঞাসা না করেই বললাম, ‘ভাই আমাকে হাফ কেজি দেন।’
পরে আরও কয়েকজন পাশ থেকে বলে উঠল, ‘আমাকে এক কেজি দেন ভাই।’
‘আমাকে আড়াইশ দেন।’
‘আমাকে হাফ কেজি।’
আমি মনে মনে হাসলাম। কারণ যতটুকু মাছ আছে আমার পরে আর কেউ পাবে কি না সন্দেহ আছে। ঘটলোও তাই। আমি মাছ নেওয়ার পড় যেটুকু অবশিষ্ট রইলো তাতে আর কারও চাহিদামতো মাছ পাওয়ার কথা না। আমি যুদ্ধজয়ের ভাব নিয়ে যখন সেখান থেকে চলে আসার জন্য পা বাড়ালাম, ঠিক তখনই অবাক হয়ে দেখলাম মাছওয়ালা তার পিছনে রাখা একটা পাতিল থেকে আরও কয়েক কেজি চিংড়ি মাছ উঠিয়ে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখলো। পিছনে আরও কয়েকটা পাতিল আছে। তার মানে সে মাছের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে একই দামে সবগুলো মাছ বিক্রি করবে। আর ক্রেতারা মাছ শেষ হয়ে যাচ্ছে এই ভেবে দরদাম না করেই দ্রুত কিনে নেবে।
আমি তার এই অভাবনীয় ব্যবসায়িক টেকনিক দেখে একই সাথে হতবাক ও রাগান্বিত হলাম। রাগটা হলো নিজের ওপর। একটু অপেক্ষা করলে হয়তো দরদাম করে কিছুটা কমে কেনা যেত।
২
মিরপুর ১২ নম্বরে দিনমজুরদের হাট বসে প্রতিদিন। সকালে। মেইন রোডের পূর্ব পাশে তারা ভিড় করে। ক্রেতারা আসে। দরদাম ঠিক করে একদিনের জন্য কাজে নিয়ে যায় তাদের।
মাছওয়ালার বুদ্ধিটা এদের দিতে পারলে কাজে লাগতো। যা ভাবা সেই কাজ । এক সকালে সেখানে চলে গেলাম। তারপর খুঁজে খুঁজে নেতা গোছের একজনকে বের করলাম। বললাম, ‘আপনারা সবাই এখানে না থেকে যদি কয়েকজন থাকতেন, আর বাকিরা আশেপাশে কোথাও লুকিয়ে থাকত, তাহলে অনেক সুবিধা হতো আপনাদের।’
‘কী সুবিধা?’
‘মানুষ কম দেখে ওরা বেশি দামে নিয়ে নিত আপনাদের?’
‘এই বুদ্ধি আপনে কোথায় পেলেন, বাবা?’
আমি তাকে মাছওয়ালার ঘটনা খুলে বললাম।
‘কিন্তু মানুষ কম দেখে যদি ঠিকাদাররা অন্য কোথাও চলে যায় তাহলে আমাদের কিনবে কে? কাজ কোথায় পাব? আয় না হলে বাড়িতে ফিরব কী নিয়ে? সবাইকে যে না খেয়ে থাকতে হবে।’
আমি বুঝতে পারলাম। সব জায়গায় এই থিওরি খাটবে না।
তিনি আবারও বললেন, ‘মাছ বিক্রি না হলে বরফ দিয়ে সে কয়েকদিন রাখতে পারবে। আমরা পেটের ক্ষুধার আগুনকে নেভাব কী দিয়ে?’