বাংলা কী মাস?
এসি চলছে গাড়িতে। ড্রাইভারের পাশের ছোট্ট স্ক্রিনে তাপমাত্রা দেখাচ্ছে বিশ ডিগ্রি। জানালার কালো কাঁচের ভিতর দিয়ে আকাশটাকে মেঘলা মনে হয়। মজিদ সাহেব বলেন, ‘আজ খুব ঠাণ্ডা পড়েছে রে!’
‘জী স্যার!’ ড্রাইভারের ত্বরিত উত্তর।
‘শীতকাল এবার যেতেই চাচ্ছে না!’
‘জী স্যার!’ ড্রাইভারের গদগদ কণ্ঠ।
বিজয় সরণীর একটু আগে হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় গাড়ি। সামনের অংশ সাদা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। ‘স্যার, দ্রুত নেমে পড়েন। আমি দেখছি।’
মজিদ সাহেব গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার পাশে দাঁড়ালেন। গাড়ির আশেপাশে উৎসুক জনতার ভিড়। ধোঁয়া কমে গিয়েছে। ড্রাইভারের গবেষণা চলল প্রায় মিনিট দশেক। তারপর বলল, ‘বুঝতে পারছি না স্যার। মেকানিক দেখাতে হবে। এখানে সিএনজি পেতে দেরি হবে। তার চেয়ে আপনি সামনে দাঁড়ানো বাসে উঠে বসুন। সোজা মতিঝিল নিয়ে যাবে।’
মজিদ সাহেব ঘড়ির দিকে তাকান। অফিসে যথাসময়ে পৌঁছতে পারবেন কি না সন্দেহ আছে। তাই আর দেরি না করে উঠে পড়েন বাসে।
অস্বস্তি লাগছে। বাসে তিনি একাই স্যুট পরে আছেন।
পাশের সিটে বসা যাত্রী বলে, ‘ভাই কি সবসময় এভাবে স্যুট পরে অফিসে যান?’
‘না ভাই। সারারাত কম্বল মুড়ি দিয়ে ছিলাম। প্রচণ্ড জ্বর। খালি ঠাণ্ডা লাগে।’
সারারাত কম্বল মুড়ি দিয়ে থাকার বিষয়টা সত্য হলেও জ্বরের ইস্যুটা ডাহা মিথ্যা। কারণ তিনি এসি চালিয়ে ঘুমিয়েছেন।
‘তাই বলেন! আমি আরও ভাবছিলাম এই গরমে আপনার এই বেশ কেন?’
বাস বাংলামোটরের জ্যামে আটকে আছে। গরম আর অস্বস্তিতে মজিদ সাহেব ঘামতে শুরু করেন। দিব্যি টের পাচ্ছেন ভিতরে সব ঘেমে একাকার। ঘাড় আর কপোলের ঘাম মুছে শেষ করতে পারছেন না। সাথে থাকা কয়েকটা টিস্যু নিমিষেই শেষ।
পাশের ভদ্রলোক মৃদু হেসে বললেন, ‘ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ছে। প্যারাসিটামল খেয়েছিলেন নিশ্চয়?’
‘জী ভাই, ঠিক ধরেছেন। এটা বাংলা কোন মাস যেন ভাই?’
‘চৈত্র। গরম দেখেও টের পাননি? সরি, ভুলেই গিয়েছিলাম যে আপনার জ্বর।’
(প্রথম প্রকাশ- প্রতিধ্বনি, ০১ মার্চ ২০২৩)