ছাড়
অফিস থেকে বের হয়ে পাঁচ মিনিট হাঁটলেই বাস স্টপেজ। এ সময়ে আড্ডা একদম পছন্দ করেন না বাছেত সাহেব। তাইতো কলিগদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ধীর লয়ে হেঁটে চলেন। চটপটি, ফুসকা, পুরি, ছোলা-মাখা কোনোটাই থামাতে পারে না তাকে।
আজ তার ব্যতিক্রম হলো। জুতার দোকানের বাইরে বিশাল সাইনবোর্ড ‘৭৫% ছাড়’। বাছেত সাহেবের চোখ কিছুক্ষণের জন্য স্থির হয়ে থাকল।
‘৭৫% ছাড়! তার মানে ১০০ টাকার কিছু কিনলে দাম পড়বে ২৫ টাকা। ২০০০ টাকা দামের জুতার দাম ৫০০ টাকা। ১৫০০ টাকা বেঁচে গেল। পছন্দ হলে দুই জোড়া কিনব।’ ভাবনা এখানেই শেষ করে দোকানে ঢুকে পড়লেন বাছেত সাহেব।
সারি সারি জুতা। কিন্তু কোথাও ছাড় এর নাম গন্ধ নেই। একজন সেলসম্যান এগিয়ে এল, ‘কী ধরনের জুতা খুঁজছেন স্যার?’
বাছেত সাহেব রাখঢাক না করে বললেন, ‘বাইরের সাইনবোর্ড…।’
কথা শেষ করতে দিল না সেলসম্যান, ‘স্যার, ওর জন্য আলাদা কর্নার করা হয়েছে। আমার সাথে আসেন প্লিজ।’
দোকানের এক কোণায় ছোট্ট একটা র্যাকে সাজানো আছে কিছু মলিন হয়ে যাওয়া জুতা আর স্যান্ডেল। ‘স্যার, এগুলোই ছাড়ে বিক্রি হবে। ১০% থেকে ৭৫% পর্যন্ত ছাড়। কোন জোড়ায় কত পারসেন্ট ছাড় তা জুতার গায়ে লিখা আছে। এগুলো কেনার পর কোনোভাবেই পরিবর্তন করা যাবে না।’
‘১০% থেকে ৭৫% পর্যন্ত কেন আবার? সাইনবোর্ডে তো শুধু ৭৫% লিখা!’
‘স্যার, আপনি মনে হয় দেখতে ভুল করেছেন। আবার দেখেন।’
বাছেত সাহেব দোকানের ভেতরে রাখা একটা সাইনবোর্ডের পাশে গিয়ে ভালো করে দেখার চেষ্টা করেন। ৭৫% এর পরে কালির একটা ছোপ লেগে আছে। তার পক্ষে খালি চোখে দেখা মুশকিল। বুদ্ধি করে মোবাইল এ ছবি তুললেন। তারপর জুম করে দেখলেন যাকে কালির ছোপ ভেবেছেন তা আসলে একটা শব্দ — ‘পর্যন্ত’।
কিছুটা হতাশ হয়ে ফিরে এলেন কাঙ্ক্ষিত র্যাকের পাশে। তন্ন তন্ন করে খুঁজলেন। কিন্তু ৭৫% তো দূরের কথা ৫০% ও খুঁজে পেলেন না। ৪০% এর এক জোড়া পাওয়া গেল। ‘কম কী! ১৭০০ টাকার জুতা ১০২০ টাকা,’ ভাবলেন বাছেত সাহেব। সেলসম্যানকে ইশারা করলেন।
‘পছন্দ হয়েছে স্যার?’
‘এই জোড়া একটু ট্রাই করে দেখি।’
‘অবশ্যই স্যার। আপনি বসেন। আমি হেল্প করছি।’
ডান পায়েরটা পরলেন। খারাপ না। কিন্তু বিপত্তিটা ঘটল নিমিষেই। ডান পায়েরটা পরতে গিয়ে গোড়ালির দিকে ছিঁড়ে গেল। আঁতকে উঠলেন বাছেত সাহেব।
‘সরি, স্যার। এগুলো অনেকদিন ডিসপ্লেতে ছিল। চামড়া দুর্বল হয়ে গিয়েছে। এটার আর কোন কপি নাই। আপনাকে আবার খুঁজে দেখতে হবে।’
বাছেত সাহেব সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। অনেক সময় নষ্ট হয়েছে, আর নয়। হঠাৎ করেই বলে উঠেন, ‘আমি যেগুলো পরে আছি সেগুলো কেমন দেখছেন?’
‘খুব ভালো স্যার! এগুলো তো আমাদেরই জুতা।’
‘কিনবেন?’
‘বুঝিনি স্যার।’
‘মানে, আমি বিক্রি করতে চাই। কিনবেন? ছাড়ে!’
‘স্যার, আমাদের বাইব্যাক পলিসি নাই। সরি!’
‘আমি ৬০% পর্যন্ত দিতে রাজি আছি।’
‘সরি স্যার, আপনি ফুটপাতের দোকানগুলোতে ট্রাই করে দেখতে পারেন’। ‘পরামর্শ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।’ বাছেত সাহেব দোকান থেকে বের হয়ে বাস স্টপেজের দিকে হাঁটা শুরু করলেন।
(প্রথম প্রকাশ- দৈনিক যুগান্তর, ২৯ মে ২০২২)