ইলেকশান
১
পরশু দিন ইলেকশান। ওয়ার্ডের রাস্তাগুলো পোস্টার আর ব্যানার দিয়ে ছেয়ে গেছে। চারিদিকে উৎসব উৎসব ভাব। যেসব রাস্তা সারা বছর ধরে কোনো আলোর মুখ দেখেনি সেগুলোও এখন আলোয় ঝলমল করছে।
শুধু ওয়ার্ড কমিশনার হাসান আলীর বাড়ির সামনে অন্ধকার। কিন্তু তারপরও মানুষের আনাগোনা এখানেই সবচেয়ে বেশি। বাড়ির ভেতরে লোকজন ঢুকছে আবার বের হচ্ছে। বাসার সবগুলো জানালা বন্ধ।
এলাকার ছেলেদের নিয়ে হাসান আলী বিশেষ বৈঠকে বসেছে। সপ্তাহখানেক আগে প্রতি বিশটি বাড়ির জন্য আলাদা করে এক এক জনকে দায়িত্ব দিয়েছিল সে। তাদের কাজ ছিল ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি তদারকি করা। সব জায়গা থেকে মোটামুটি ভালো খবর পাওয়া যাচ্ছে। ধরেই নেওয়া যায় সে আবারও ওয়ার্ড কমিশনার হতে চলেছে। কিন্তু একটা সমস্যা আছে। সেটা হলো ডোবা বস্তি। বস্তির জন্য প্রায় চল্লিশ জনকে দায়িত্ব দিয়েছিল সে। রিপোর্ট খুব খারাপ। দায় আছে হাসান আলীর। মাস পাঁচেক আগে বস্তিতে পানির সমস্যা হয়েছিল। প্রথম দিকে বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে সে সমস্যা সমাধান করতে প্রায় মাসখানেক সময় লেগে গিয়েছিল। কিন্তু সেই ঘটনা যে ইলেকশানে এতটা প্রভাব ফেলবে তা চিন্তাতেও আসেনি তার।
সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে আরেক প্রার্থী মশাররফ হোসেন। সে কয়েকদিন নিজ টাকায় ওয়াসার পানির ট্রাক এনে সবার জন্য খাবার পানির ব্যবস্থা করেছে। বস্তির মানুষ তার ওপর খুব খুশি। এটা নিয়েই ভয়ে আছে হাসান আলী। বস্তির প্রায় আড়াই হাজার ভোট ওয়ার্ডের ইলেকশানের চিত্র পাল্টে দিতে পারে।
হাসান আলীকে বেশ চিন্তাগ্রস্ত দেখায়। সে বলে, তোরা এখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর। আমি তোদের জানাবো কার কী করতে হবে।
তারপর সে একদম ঘনিষ্ঠ তিন সহযোগীকে নিয়ে পাশের একটা ঘরে যায়।
হাসান আলীর সবচেয়ে কাছের মানুষ মিজু মিয়া। তার সাথে ছায়ার মতো লেগে থাকে সে। তার মুখ থেকেই হাসান আলী হতাশার কথা শোনে, গতবারের মতো বস্তিতে টাকা দেওয়া যাবে না এবার। মশাররফ পাহারা বসিয়েছে।
হাসান আলী ক্ষেপে যায়। বলে, তা আমি জানি। কিন্তু ওদের ভোট আমি টাকা দিয়েই নিব। তোরা একটা বুদ্ধি বের কর। বুদ্ধি।
তার বাকি দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী সোহেল আর আরমানকে খুব চিন্তিত দেখায়। মিজু মিয়া বলে, বুদ্ধি একটা মাথায় এসেছে ভাই। কিন্তু ভয় আছে।
তারপর হাসান আলীর দিকে তাকায়। হাসান আলী মিজু মিয়ার চোখের ভাষা পড়তে পারে। সোহেল আর আরমানকে বলে, তোরা দুজন বাইরে যা। পরে ডাকছি তোদের।
মিজু মিয়া হাসান আলীর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, ভাই, বস্তিতে যদি কোনো কারণে আগুন লাগে, তাহলে কিন্তু ভোটের দিন সকালেও ভোটারদের টাকা দেওয়া যায়। আবার তুমি চাইলে ওদের একবেলা খাওয়ানোও যায়।
হাসান আলীর চোখ দুটো চকচক করে ওঠে। মিজু মিয়ার মাথাটা কাছে টেনে নিয়ে কপোলে একটা চুমু খায়। বলে, পারবি তো সব ম্যানেজ করতে? কোনো কেলেঙ্কারি যেন না হয়।
ধরে নাও সব হয়ে গেছে।
মানুষ মারা যাবে না তো?
না, ভাই। কাজটা করব ফজরের আযানের পর। আযান শুনে অনেকের ঘুম ভেঙে যায়। আর দশ-বারোজনকে দায়িত্ব দেবো দূর থেকে টিনের উপরে ইটের টুকরা মারার জন্য। এতে প্রায় সবাই জেগে উঠবে।
বিশ্বস্ত ছেলেদের কাজে লাগাবি।
সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি এক হাজার টাকার চকচকে নতুন নোট রেডি করো। এক হাজার করে আড়াই হাজার মানুষের জন্য লাগবে ২৫ লাখ। কিন্তু তোমার যাবার দরকার নাই। আর কাছের কোনো ব্যাংক থেকে টাকা উঠানো যাবে না।
টাকা নিয়ে তোর চিন্তা করার দরকার নাই। আরও বেশি টাকা আগেই রেডি করা আছে । যাদের কাজে লাগাবি তাদের আগেই টাকা দিবি। প্রত্যেকের সাথে আলাদা করে কথা বলবি। তুই যে কাজে লাগাচ্ছিস তার যেন কোনো সাক্ষী না থাকে। আর কথা বলার সময় ওদের মোবাইল বন্ধ রাখবি। বুঝিস তো, অনেকে আবার রেকর্ড করে।
ঠিক আছে ভাই। তুমি তাহলে ঘুমাও এখন। আমি ওদের সবাইকে নিয়ে চলে গেলাম।
ঘুম কী আর এতো সহজে ধরবে আজ!
টেনশন করো না। সকাল নয়টার দিকে আসব আমি।
যা। সাবধানে কাজ করিস কিন্তু।
২
হাসান আলী তার মোটরসাইকেল বাহিনী নিয়ে দাঁড়ায় চেরু মিয়ার খিচুড়ির হোটেলের সামনে। চেরু মিয়া তাড়াতাড়ি চেয়ার ছেড়ে উঠে আসে।
সে কিছু বলার আগেই হাসান আলী বলে, কাল সকালে আমার দশ পাতিল খিচুড়ি লাগবে।
ভাই, আপনি তো জানেন, হামি অ্যাক ডেকচির বেশি খিচুড়ি করিনা। হামাক মাফ করেন ভাই।
তোমার কপালে খারাবি আছে মিয়া। খারাবি আছে।
একজন মারার জন্য এগিয়ে আসে। হাসান আলী বাধা দেয়, ওই খাড়া, ইলেকশানটা পার হতে দে।
চেরু মিয়ার মনে পড়ে গত ইলেকশানের সময়ও এমনটা হয়েছিল। কিন্তু হাসান আলী তাকে টলাতে পারেনি। তার একটাই নীতি। এক পাতিল খিচুড়ি রান্না হবে। একশজন মানুষ খাবে।
চেরু মিয়া তার চেয়ারে গিয়ে বসে। টাকার হিসাব করতে করতে হাঁক ছাড়ে, আর কয় পেলেট?
পাতিলের ঢাকনা উঠায়ে অবশিষ্ট খিচুড়ির পরিমাণ আন্দাজ করে আলম বলে, খুব বেশি হলে দশ পেলেট।
চেরু মিয়া তার মোবাইল ফোনে সময় দেখে। দশটা বাজতে বেশি সময় বাকি নাই। সাধারণত সকাল এগারোটার মধ্যেই তার একপাতিল খিচুড়ি শেষ হয়ে যায়। কাস্টমারের টান দেখে মনে হচ্ছে আজ আরও আগে শেষ হয়ে যেতে পারে।
ডোবা বস্তির উত্তর পাশ দিয়ে যাওয়া মেইন রোডের পাশেই চেরু মিয়ার হোটেল। বছর বিশেক আগে এখানে বিশাল একটা পুকুর ছিল। চারপাশের লোকজন ময়লা ফেলতে ফেলতে তাকে ডোবা বানিয়ে ফেলে। এলাকায় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বাড়ার সাথে সাথে ডোবার পাশ দিয়ে ছোট ছোট টিনের ঘর উঠতে থাকে। এখন আর ডোবায় কোনো পানি নাই। পুরোটা জুড়ে টিনের ঘর। একতলা ঘর। কোথাও কোথাও আবার দোতলা। এসব ঘরে যারা থাকে তাদের বেশির ভাগই আশেপাশের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোতে কাজ করে। কেউ বাসাবাড়িতে কাজ করে। কেউ রিকশা চালায়। কেউ দিনমজুর। সব মিলিয়ে প্রায় হাজার পাঁচেক মানুষ বাস করে ডোবা বস্তিতে। বস্তির চার দিক থেকে চারটা সরু হাঁটার পথ বের হয়ে মেইন রোডের সাথে মিশেছে।
উত্তর পাশের পথ যেখানে বের হয়েছে তার পাশেই চেরু মিয়ার হোটেল। হোটেল বলতে একটা টিনের ঘর। ভেতরে দুইটা প্লাস্টিকের টেবিল আর তার সাথে আটটা চেয়ার। হাত ধোয়ার জন্য ছোট একটা বেসিন। চেরু মিয়ার বসার জন্য আলাদা চেয়ার টেবিল। দুইজন সহযোগী আছে তার। আলম আর হারুন। আলমের কাজ হলো প্লেটে বা প্যাকেটে পরিমাণমত খিচুড়ি উঠায়ে দেওয়া। হারুন কাস্টমারের কাছে তা পৌঁছে দেয়। সাথে পানি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে। প্লেট পরিষ্কার করার জন্য একজন ঠিকা বুয়া আছে। সে সকাল সাতটা থেকে এগারোটা পর্যন্ত কাজ করে।
চেরু মিয়া প্রায় এক যুগ ধরে খিচুড়ি বিক্রি করছে এখানে। তিরিশ বছর বয়সে বগুড়া থেকে ঢাকায় এসেছিল সে। প্রথমে রিকশা চালাত। একই এলাকার বিশজনের মতো রিকশাচালক দুই ঘর ভাড়া নিয়ে থাকত। মাঝে মাঝে সবাই একসাথে খিচুড়ি রান্না করে খেতো। আর এই রান্নার দায়িত্ব পড়ত চেরু মিয়ার ঘাড়ে। পরে এক মুরুব্বির পরামর্শে রিকশা চালানো ছেড়ে দিয়ে খিচুড়ির হোটেল দেয় সে। হোটেল ব্যবসায় ভালো আয় হওয়ায় তার পাঁচ বছরের ছোট ভাই বিরু মিয়াকে নিয়ে আসে। তার মাস দুয়েক পরে আনে এলাকার দুই ছেলে আলম আর হারুনকে। কাছাকাছি বয়সের। বড়জোর সতেরো হবে এখন।
ভাইয়ের সাথে সুসম্পর্ক বেশিদিন টেকেনি বিরু মিয়ার। ভাইয়ের এক পাতিল খিচুড়ি রান্নার ঘোর বিরোধী সে। অনেকদিন আড়ালে বললেও একদিন চেরু মিয়ার মুখের ওপর বলে বসে, বউ ছল বাড়িত থুয়া ঢাকা আচ্চি ব্যবসা করবা। অ্যাক বেলা কাম করা আরাক বেলা এটি বসা থাকপার আচ্চি নাকি?
তারপর থেকে আর একসাথে কাজ করা হয়নি দুই ভাইয়ের। বিরু মিয়া বস্তির দক্ষিণ পাশে আলাদা হোটেল তৈরি করে। এখন সেটা বেশ বড়। দুই চুলায় রান্না চলে। সাত আটজন কাজ করে তার সাথে । সারাদিন ধরে তার হোটেল খোলা থাকে । খিচুড়ি ছাড়াও তেহারি, রুটি, পরাটা, ভাত-তরকারি সবই পাওয়া যায়।
আলম আর হারুনও সারাদিন হোটেল খোলা রাখার পক্ষে। কিন্তু চেরু মিয়াকে বলার সাহস কারও নাই। আলমের ইচ্ছা যখন সে এরকম একটা হোটেলের মালিক হবে, তখন সন্ধ্যায় হালিম, পিঁয়াজু, পুরি বিক্রি করবে। হারুন আরও এক ডিগ্রি উপরে। সে মালিক হলে সন্ধ্যায় কাবাব, গ্রিল চিকেন, নানরুটি চলবে। নিজে মালিক না হওয়া পর্যন্ত আপাতত তারা চেরু মিয়ার রুটিনে তাদের জীবন বাঁধা।
চেরু মিয়ার রুটিন একটাই – ফজরের নামায পড়ে খিচুড়ি রান্না শুরু করে, সাতটার মধ্যে রান্না শেষ। সাড়ে এগারোটায় হোটেল বন্ধ। বিকেলে পরের দিনের বাজারসদাই । এশার নামায পড়ে খেয়ে হোটেলের মেঝেতে আলম আর হারুনকে সাথে নিয়ে ঘুম। প্রতি দুই মাস পর তারা তিনজন বগুড়ায় গ্রামের বাড়িতে যায় সে। সাতদিনের জন্য হোটেল বন্ধ থাকে। ঐ সাতদিন ছাড়া তার একই রুটিন। দুইচারটা ব্যতিক্রম ছাড়া এভাবেই চলছে বছরের পর বছর।
৩
ইলেকশান এর আগের রাত হলেও চেরু মিয়ার রুটিনে কোনো ছেদ পড়েনি। কিন্তু যথাসময়ে বিছানায় গিয়েও ঘুম ছিল না তার চোখে। অজানা আশঙ্কায় বারবার কেঁপে উঠছিল তার মন। কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল মনে নেই তার।
আযানের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। ভাবল, আর কিছুক্ষণ পরে উঠবে। আশেপাশে কোনো টিনের উপরে কিছু পড়ার শব্দ শুনতে পেল। মিনিট দশেক পার হয়নি। তার কানে এলো মানুষের আর্তনাদ। বাইরে বের হয়েই দেখতে পেল আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে যাচ্ছে বস্তির টিনের ঘরগুলো। চারিদিকে মানুষের ছোটাছুটি।
এক মুহূর্তও দেরি না করে সে ছুটে গেল বস্তির ভেতরে। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন চারদিক। ওর ভেতর থেকেই নিথর হয়ে পড়ে থাকা ছোট দুই বাচ্চাকে দুই কোলে নিয়ে বেরিয়ে এল রাস্তায়। ওদের রেখে আবার ছুটে গেল। কিন্তু এবার মনে হচ্ছিল সে নিজেই বেরোতে পারবে না। আগুনের উত্তাপ আর ধোঁয়া তার সমস্ত শরীরকে নিস্তেজ করে দিচ্ছিল। মানুষ পুড়ে যাচ্ছে আর সে কিছুই করতে পারছে না। কাঁদতে কাঁদতে সে যখন রাস্তায় এল, দেখল আগুন তার হোটেল পর্যন্ত চলে এসেছে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন তার হোটেলে পাইপ দিয়ে পানি মারছে । রাস্তার উল্টো পাশে তার পাতিল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আলম আর হারুন। দুজনেই ভয়ে কাঁপছে।
প্রায় দেড় ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু ততক্ষণে বস্তির কোনোকিছুই পোড়ার বাকি নাই।
চেরু মিয়া তার হোটেলের পুড়ে যাওয়া টিন, টেবিল, চেয়ারগুলো এক জায়গায় জড়ো করে। অন্য দিনের মতোই বাড়িতে কথা বলে যেন কিছুই হয়নি। হঠাৎ করেই চেরু মিয়ার মনে পড়ে তার ভাইয়ের কথা।
হারুনকে বলে, তুই সব জিনিসপত্র পাহারা দে।
তারপর আলমকে সাথে নিয়ে মেইন রোড ধরে দৌড়ে যায় বস্তির দক্ষিণ পাশে।
৪
বিরু মিয়ার হোটেলের সামনে হাসান আলীর লোকজন দিয়ে ভর্তি। রাস্তার এক পাশে বিশাল প্যান্ডেল করা হয়েছে। সেখানে সারি করে সাজানো আছে বিশটা পাতিল। বস্তির ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত মানুষগুলো লাইনে দাঁড়িয়ে খিচুড়ির প্যাকেট নিচ্ছে। সাদা পাঞ্জাবি পরা হাসান আলী এক এক করে সবাইকে বুকে জড়িয়ে ধরছেন। তারপর হাতে খিচুড়ির প্যাকেট আর এক হাজার টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিয়ে বলছেন, আমি তোমাদের পাশে আগেও ছিলাম, এখনো আছি, আগামিতেও থাকব। আমাকে ভোটটা দিয়ে আসো। সাত দিনের মধ্যে তোমাদের ঘর আগের মতো হয়ে যাবে।
চেরু মিয়া বিরুর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। বলে, তুই কুন সময় খিচড়ি আন্দা শুরু করচু?
বিরু মিয়া চোখ নিচু রেখেই বলে, আগুন লাগার কিছুক্ষণ পরে ভাই। হাসান ভাই আসা জোর করা কলো, তাই আর না করবার পারিনি। এত বড় দিলের মানুষ হাসান ভাই। হামাক কলো, তুই খিচুড়ি পাকাতে থাক। অ্যাকটা মানুষ যান না খায়া থাকে। চাল ডাল সব অরাই দিচে।
চেরু মিয়ার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। বলে, তোর এই ম্যাজিক চুলা হামাক দে। তুই দুই ঘোণ্টার মধ্যে ক্যাঙ্ক্যা করা বিশ ডেকচি খিচড়ি করলু? তাও আবার দুই চুলা দিয়া?
বিরু এইবার তার ভাইয়ের দিকে তাকায়।
চেরু মিয়ার বোঝার কিছু বাকি থাকেনা । খিচুড়ি রান্না শুরু হয়েছে অনেক আগে। বস্তিতে আগুন লাগাও কি একটা পরিকল্পনার অংশ ? তার মাথা ঝিম ঝিম করতে থাকে। বিরুও কি এর সাথে জড়িত ? নিজেকে আর সামলাতে পারে না সে। একটা থাপ্পড় দেয় ওর গালে। বলে, এ হারামি, তুই কত টাকা খাচু ?
বিরু হতচকিত হয়ে যায়। মাথা নিচু করে চুপ করে থাকে সে।
চেরু মিয়া আলমকে নিয়ে নিজের হোটেলের দিকে রওনা দেয়। হাসান আলী তাকে দেখে গলা উঁচিয়ে বলে, ওই মিয়া, খিচুড়ি নিয়া যাও। টাকা নিয়া যাও। তোমার হোটেলও তো পুড়ছে। তোমার লাইনে দাঁড়ানো লাগবে না। আসো। তাড়াতাড়ি আসো।
চেরু মিয়ার চোখে আগুন ঠিকরে ওঠে। বলে, খামোনা তোমার খিচড়ি। হামার অ্যাক ডেকচি খিচড়ি ঠিকি রান্না করমো। আর আজ ফিরি খাওয়ামো। ভয় নাই, কারু জন্য ভোট চামো না।
তারপর আলমের পিঠে ধাক্কা দিয়ে বলে, তুই দৌড়া যা। ইটা দিয়া চুলা রেডি কর। হামি সব নিয়া আসিচ্চি।
লাইনে দাঁড়ানো বেশ কয়েকজন চেরু মিয়ার পাশে দাঁড়ায়। ওদেরই একজন বলে, চল মিয়া, তোমার সাথেই আজ রান্না করি। সাহায্য নেওনের দরকার নাই।
চেরু মিয়া হাঁটতে থাকে আর তার দল ভারি হতে থাকে। হাসান আলী অবাক হয়ে চেয়ে থাকে চেরু মিয়ার দলের দিকে। ফুলস্পিডে চলা স্ট্যান্ডফ্যানের পাশে বসেও ঘামছে সে। তার মনে হলো ইলেকশানের হাওয়া অন্যদিকে বইতে শুরু করেছে।
(প্রথম প্রকাশ- নতুন এক মাত্রা, বর্ষা -জুলাই-আগস্ট ২০২২)