অবাক রিসাইকেল বিন
স্কুল থেকে বাসায় ফিরছে আবিদ। দুপুর হলেও সূর্যের দেখা মেলেনি। শৈত্য প্রবাহ চলছে। কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে। চারিদিক এখনও কুয়াশায় ঢাকা। রাস্তায় লোকজন কম।
ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময় হঠাৎ করেই একটা প্যাকেটের সাথে হোঁচট খায় আবিদ। পায়ের সাথে লেগে একটু দূরে ছিটকে পড়ে প্যাকেটটা। সোনালি রঙের। প্যাকেটটা এতই সুন্দর যে আবিদ একরকম বাধ্য হয়েই হাতে তুলে নেয়। প্যাকেটের গায়ে কিছুই লেখা নাই। এক পাশে ছিঁড়ে ফেলতেই ভেতর থেকে সোনালি রঙের আরেকটা ছোট প্যাকেট বেরিয়ে আসে। আবিদ দেখেই বুঝতে পারে ভেতরে একটা পেন ড্রাইভ আছে।
বাসায় ঢুকেই কম্পিউটারের সামনে বসে যায় আবিদ। সোনালি রঙের পেন ড্রাইভটা ইউএসবি পোর্টে দিতেই একটা অদ্ভুত শব্দ শুনতে পায়। কম্পিউটারের স্ক্রিন পুরোটা কালো হয়ে যায়। একটু পরেই সোনালি একটা রং ছড়িয়ে নতুন টাইপের স্ক্রিন আসে। কোনো ধরনের লেখা বা ছবি কিছুই নাই। তবে মাউস নিয়ে নাড়াচাড়া করতেই স্ক্রিনে মাউসের কার্সর দেখতে পায় আবিদ। সাথে ভেসে ওঠে বেশ বড় আকারের একটা রিসাইকেল বিন। মাউসের লেফট ও রাইট বাটন দুটোই কাজ করছে।
আবিদ দেখতে পায় কম্পিউটারের সোনালি রঙের স্ক্রিনটা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, তার স্ক্রিনে সে তার পুরো ঘরটা দেখতে পাচ্ছে। দেয়ালে একটা টিকটিকি বসে আছে। সেটাও ক্রিনে দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ করেই মাথায় একটা বুদ্ধি আসে আবিদের। সে মাউস দিয়ে কার্সরটা টিকটিকির ওপর নিয়ে লেফট বাটন ডাবল ক্লিক করে ওটাকে সিলেক্ট করে। ডিলিট বাটনে চাপ দিতেই স্ক্রিন থেকে টিকটিকি উধাও। দেয়ালের দিকে চেয়ে দেখে টিকটিকিটা সেখানেও নাই। পরে রিসাইকেল বিন-এ গিয়ে খুঁজে পায় তাকে। রাইট ক্লিক করে রিস্টোর করতেই দেয়ালে ফিরে আসে টিকটিকিটা। আবিদ তার এই আবিষ্কারে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়।
আবিদ একে একে তার কলম, টেবিল ল্যাম্প ও স্কুল ব্যাগের ওপর একই পরীক্ষা চালায়। সবকিছুকেই রিসাইকেল বিন-এ পাঠানো যায়, আবার ফিরিয়েও আনা যায়। নিজের ঘরের পরীক্ষা শেষে আবিদ আরও একটু সাহস করে তার ঘরের দরজায় ক্লিক করে। সাথে সাথে দরজা খুলে যায়। আবিদ মাউস ঘুরিয়ে চলে যায় রান্নাঘরে। ময়লা রাখার পলিথিনের ব্যাগটা ‘সিলেক্ট’ করে সে। এবার ব্যাগটাকে ‘ডিলিট’ না করে ‘কাট’ করে নেয় সে। তারপর বাসার দরজা দিয়ে বের হয়ে গ্যারেজে রাখা ময়লার ড্রামে ‘পেস্ট’ করে। পরে সে কম্পিউটার টেবিল থেকে উঠে গিয়ে প্রথমে রান্নাঘরে দেখে। ময়লাসহ পলিথিনের ব্যাগ উধাও। পরে গ্যারেজে গিয়ে ময়লার ড্রামে দেখে তাদের হাল্কা নীল রঙের পলিব্যাগ। আবিদ একরকম লাফাতে লাফাতে তার ঘরে ফিরে আসে।
আরও কী করা যায়? আবিদ কম্পিউটারের সামনে বসে ভাবতে থাকে। স্ক্রিনে মাউস ঘুরিয়ে সে নেমে যায় বাসার সামনের রাস্তায়। রাস্তায় থাকা কাগজ, চিপসের ব্যাগ, পলিথিনের ব্যাগ, কলার খোসা সিলেক্ট করে একবারে ‘কাট’ করে তাদের ময়লার ড্রামে পেস্ট করে দেয়। বারান্দায় গিয়ে দেখে রাস্তাটা আগের চেয়ে অনেক পরিষ্কার দেখাচ্ছে। তবে দেয়ালের পোস্টার আর লেখাগুলো সরাতে পারলে আরও ভালো লাগবে। আবিদ আবার বসে যায় তার কম্পিউটারে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই দেয়ালের পোস্টার আর লেখা সব উধাও।
মেইন রোডের ওপর পার্ক করে রাখা গাড়িটার দিকে নজর পড়ে আবিদের। গাড়িটাকে সে ‘কাট’ করে নিয়ে আবাসিক এলাকার ভেতরে নিরিবিলি একটা রাস্তায় ‘পেস্ট’ করে। বাসের হর্নগুলো ডিলিট করতে পারলে খুব আনন্দ পেত। আবিদ ভাবে, ধীরে ধীরে সব হবে। তবে বিষয়টা সবার থেকে গোপন রাখতে হবে। ঠিক সেই সময় আবিদের মা তার ঘরে প্রবেশ করে। আবিদ দ্রুত তার মনিটরটা বন্ধ করে দেয়।
মা ডাকে, আবিদ, এই আবিদ।
আবিদ ভাবে, আশ্চর্য! আমি এখানে আছি অথচ মা আমাকে দেখতেই পাচ্ছে না!
মা আবার ডাকে, আবিদ।
পিঠে মায়ের হাতের স্পর্শ পেতেই বিছানা থেকে লাফিয়ে ওঠে আবিদ। তার মানে, সে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল। দ্রুত বিছানা ছেড়ে স্কুলের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। ব্যাগ কাঁধে করে নিয়ে যখন বাসা থেকে নামতে যাবে, তখনই তার মনে পড়ে ময়লার পলিথিন ব্যাগের কথা। মাকে বলে, মা, ময়লার ব্যাগটা দাও। আমি গ্যারেজের ড্রামে ফেলে দিয়ে যাব।
আবিদের কথা শুনে মা একটু অবাকই হয়।
রাস্তায় নেমেও আবিদ আশেপাশের দুই একটা কাগজ আর পলিথিন কুড়িয়ে নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। তার মনে অন্যরকম একটা আনন্দ। আবিদ ভাবে, সোনালি পেন ড্রাইভ সবার মধ্যেই আছে। শুধু কাজে লাগাতে হবে। আর একটা জিনিস বুঝে গেছে সে, ‘নিজের চারপাশ পরিষ্কার রাখার মজাই আলাদা।’