আমন্ত্রণ
আরেকজনের বাসায় গিয়ে খাওয়ার পর্বগুলো ইদানীং খুব বেশিমাত্রায় চলছে। এসব আমন্ত্রণে সাড়া দিতে দিতে তা আফসার সাহেবের জন্য একরকম বিতৃষ্ণার পর্যায়ে চলে গেছে। তাইতো বিভিন্ন অজুহাতে পাশ কাটিয়ে যেতে পারলে ভালোই লাগে তার। তবে আজকের আমন্ত্রণ একদম আলাদা। খুব প্রিয় একজন মানুষের বাসায় যেতে হবে।
রাত নয়টায় হাজির হওয়ার কথা থাকলেও ট্রাফিকজ্যামের কারণে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত সাড়ে নয়টা বেজে যায়। অতিথির সংখ্যা মাত্র আটজন। সৌজন্য আলাপ শেষ করেই বসে পড়লেন খাওয়ার টেবিলে।
আফসার সাহেবের খাওয়ার স্বাভাবিক সময় পার হয়ে গেছে অনেক আগেই। তার আর তর সইছে না। একটু গলা ভিজিয়ে নেওয়ার জন্য পানির গ্লাসের দিকে হাত বাড়াতেই একটা নারীকণ্ঠ বলে উঠল, ‘ভাই, একটু অপেক্ষা করেন। অনেক কষ্ট করে খাবার টেবিল সাজিয়েছি। আগে কয়েকটা ছবি তুলে নিই। তারপর খাওয়া শুরু করেন। ততক্ষণ একটু হাসিমুখে থাকেন।’
দুইএকটা ছবি তুলতেই বড় বিপত্তি ঘটে গেল। নেমে এল নিকষ কালো অন্ধকার। ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেল। জেনারেটর চালু হলেও ডাইনিং-এ একটা বাতি থেকে যে আলো পাওয়া গেল, তাতে ছবির গুণগতমান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে না যাওয়ায় অপেক্ষার পালা বাড়তে থাকল। অতিথির দুএকজন উশখুশ করলেও গৃহকর্ত্রীর একই কথা। ইলেক্ট্রিসিটি আসবে। তিনি মনের মতো করে কয়েকটা ছবি তুলবেন। তারপর খাওয়ার পর্ব শুরু হবে।
ইলেক্ট্রিসিটি এল সাড়ে দশটার দিকে। গৃহকর্ত্রীর মুখে হাসি ফুটল। অতিথিগণও জোর করে হাসিখুশি মুখে পোজ দিলেন। গৃহকর্ত্রী মিনিটপাঁচেক সময় নিয়ে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে ছবি তুললেন। তারপর স্টার্ট বলা মাত্র আফসার সাহেবসহ অন্যান্য অতিথি একদম ঝাঁপিয়ে পড়লেন। কিন্তু গত এক ঘণ্টায় খাবারের গন্ধে যতটা আকর্ষণ জমা হয়েছিল, তা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া খাবার মুখে দিতে এক নিমিষেই উবে গেল।
গৃহকর্ত্রী ততক্ষণে ফেসবুকে ছবি আপলোড করে ফেলেছেন। মুখের হাসি দেখেই বোঝা যাচ্ছে তার পরিবেশনা লাইক-কমেন্টস এ ভেসে যাচ্ছে। তার পরিশ্রম সার্থক হয়েছে।
আফসার সাহেব গৃহকর্ত্রীর হাসিমুখ দেখেই খুশি হয়ে খাবার শেষ করে বাড়ির পথ ধরলেন।
১৫ নভেম্বর ২০২২