আইসক্রিম
আইসক্রিম কিনে এখন আর টেনশনে থাকতে হয় না। বাসা থেকে মাত্র দুই প্লট পরেই সুপার শপ। চারটা চকবার কিনে ফাঁকা একটা কাউন্টারে দাঁড়ালাম। সেলস গার্ল মোবাইল ফোনে কথা বলছে।
‘আমাকে একটু তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেবেন, প্লিজ।’
মেয়েটা আমার দিকে তাকাল, কিন্তু তার কোনো ভাবাবেগ দেখলাম না। অন্য কাউন্টারে যেতে গিয়েও সেখানে স্তূপ করে রাখা এক ক্রেতার মালামাল দেখে থেমে গেলাম।
‘আমাকে একটু তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেবেন, প্লিজ।’ আমি আবার বললাম।
মেয়েটা এবার আইসক্রিমগুলো নিয়ে বিল করা শুরু করল। এন্ট্রি না দিতেই আবার ফোন । আবার কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল সে। এবার আমার মেজাজ চড়ে গেল।
‘আপনি কি এখানে কাজ করতে এসেছেন, নাকি কথা বলতে এসেছেন?’
মেয়েটা তার কথা বলা শেষ করল তারপর আইসক্রিম এর বিল করে আমার দিকে এগিয়ে দিল। তার মুখে কোনো শব্দ না দেখে আমার মেজাজ আরও চড়া হয়ে গেল।
‘কাজ করতে চাইলে একটু ভদ্রতা শেখেন। কাস্টমারদের দিকে খেয়াল করেন।’
মনে মনে ভাবলাম ‘এই মেয়েটার বিরুদ্ধে পরে একদিন অভিযোগ করতে হবে’, তারপর দ্রুত বাসার দিকে পা বাড়ালাম।
লিফটে ওঠার পরপরই মনে হলো, মেয়েটার সাথে এরকম আচরণ করাটা উচিত হয়নি। আমার ভাবনার বেড়াজাল ছিন্ন করে জোরে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে লিফট আটকে গেল। অপেক্ষা করলাম। সাধারণত এক মিনিটের মধ্যে অটো চালু হয়ে যাওয়ার কথা। হলো না। লিফট হ্যাং হয়ে গেলে বাসার কেয়ারটেকার বিশেষ কি একটা পদ্ধতিতে লিফট খুলতে পারে। সেটাও কাজ করল না। লিফটের বাইরে আমার গিন্নীর কান্নাকাটির শব্দ শুনতে পাচ্ছি। মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করলাম। নেটওয়ার্ক পেলাম না। বিশ মিনিট পেরিয়ে গেছে। মাঝেমাঝে চিৎকার করে বলছিলাম, আমি ভালো আছি।
আসলে আমি ভালো ছিলাম না। গরমে ঘেমে ধুয়ে একাকার। লিফটের মেকানিক এনে প্রায় আধাঘণ্টা পরে লিফট চালু করে আমাকে বের করা হলো।
লিফট থেকে বের হতেই আমার মনে পড়ল হাতের ব্যাগে রাখা প্রায় গলে যাওয়া চকবারের কথা। বাসার লোকজনের আপত্তি উপেক্ষা করে ছুটে গেলাম সুপার শপে। কাউন্টারে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আধাঘণ্টা আগে এখানে যে মেয়েটা ছিল সে কোথায়?’
‘সুমি?’
‘আমি তো নাম জানি না। তবে আধাঘণ্টা আগে এই কাউন্টারেই ছিল সে। মোবাইল ফোনে কথা বলছিল বারবার।’
‘ওর নাম সুমি। ওর বাবা কিছুক্ষণ আগে মারা গেছে। ও হাসপাতালে গেছে কিছুক্ষণ আগে।’
আমি হাসপাতালের নাম শুনে দ্রুত রওনা হলাম। লাশ খুঁজতে। একটা লাশ পেলেই পাওয়া যাবে মেয়েটাকে।
এসময় ওর মন বেশি নরম হয়ে আছে। খুব দ্রুত ক্ষমা পাওয়া যাবে।
২১ নভেম্বর ২০২২